
মুলাক্কারাম
- 19 Jun, 25
- 06:00 PM - 08:00 PM
- Madhusudan Mancha: Kolkata
- অষ্টাদশ শতকের কেরালা। জঘন্য বর্বরতা, কুসংস্কার ও জাতিভেদ প্রথা আচ্ছন্ন সেই অনাকাঙ্খিত ইতিহাসের আঁতুরঘরে জন্ম নিয়েছিল মুলাক্কারাম। না, মুলাক্কারাম কোনও মন্দির না, গির্জা না, আমাদের গল্পের কোন চরিত্র? না, তাও না। মুলাক্কারাম ইতিহাসের সিলেবাসে না স্থান পাওয়া এক পাশবিক সরকারি ফরমান, জাতিবৈষম্যতার জীবন্ত দলিল। মুলাক্কারাম ছিল মূলত কেরালার দলিত নাদার ও ইজাভা সম্প্রদায়ভুক্ত মহিলাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া এমন এক অমানবিক, পৈশাচিক কর (Tax) যা আজ ইতিহাসের অতল সমুদ্রে নিখোঁজ। আর সেই নিখোঁজের খোঁজেই সময়যানের এই যন্ত্রে আমরা সবাই। সময়ের চাকা ঘুরতে চলেছে ২০০ বছর আগে।
- মূলত উচ্চবর্নের ব্রাহ্মণ দ্বারা পরিচালিত সেই সমাজ ব্যবস্থায় দলিত সম্প্রদায় ছিল সম্পূর্ণ উপেক্ষিত, অবহেলিত ও অত্যাচারিত। প্রায় ১১০ টি অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়ে ছিল নাদার ও ইজাভা উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর। তার মধ্যে মুলাক্কারাম ছিল সবচেয়ে জঘন্য। দলিত সম্প্রদায় মহিলাদের স্তন আবৃত রাখার কোন নির্দেশ ছিল না। আর যদি কেউ স্তন আবৃত রাখতে ইচ্ছা প্রকাশ করত তবে তার বিধান ছিল মুলাক্কারাম। মুলাক্কারাম কর দিতে হত মহিলাদের লজ্জা নিবারণ করতে। এই কর ব্যতীত দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত কোনো মহিলাই তাদের স্তন আবৃত রাখতে পারতেন না। ইতিহাসে এধরনের অমানবিক কর ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিরল।
- এইবার একটা গল্প বলি। নাংগেলির গল্প। তার প্রতিবাদের গল্প। নাংগেলি ইজাভা উপজাতির মেয়ে। এই জঘন্য কর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সে প্রতিবাদ করে। সে মুলাক্কারাম দিতে অস্বীকার করে। কুলীন ব্রাহ্মণ সমাজ নাংগেলির এই প্রতিবাদে বিস্মিত ও হতবাক। তারা নাংগেলির ওপর অকথ্য মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। কর আদায়ের নামে প্রতিদিন তার ঘরে চড়াও হয় কর আদায়কারী কর্মকর্তা প্রভাথিয়ার ও জমিদারের লেঠেল। বিভিন্ন রকম ভাবে ভয় দেখানো হয় তাকে। অশ্লীল মন্তব্য, গালিগালাজ, ধর্ষনের ইঙ্গিত- কাপড় টেনে ধরা কোনকিছুই বাদ রাখেনা তারা। রকম এক পরিস্থিতিতে, প্রচন্ড মানসিক চাপে জর্জরিত নাংগেলি বেছে নেয় এক পথ। সে এক ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের স্তন দুটি কেটে একটি কলাপাতায় সাজিয়ে তুলে দেয় জমিদারের লেঠেলদের সামনে। মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও প্রবল যন্ত্রণায় নাংগেলির মৃত্যু হয়।
- এই ঘটনাটি যেদিন ঘটে নাংগেলির স্বামী চিরকান্দান সেদিন কর্মসূত্রে চেরথেলায় ছিলেন না। পরেরদিন যখন তিনি ফেরেন, নাংগেলি তখন চিতায়। মূহুর্তের ভিতর ঘটে যায় আরেকটি ইতিহাস। স্ত্রীর চিতায় নিজেকে আত্মহুতি দেয় চিরকান্দান। ইতিহাসে বোধকরি চিরকান্দানই প্রথম ও শেষ পুরুষ সতী। ইতিহাস তাকেও মনে রাখেনি। নাংগেলি ও চিরকান্দান-এর আত্মবলিদান যদিও বৃথা যায়নি। রাতারাতি চেরথেলা সহ গোটা
- ট্রাভেনকোরে জ্বলে ওঠে বিপ্লবের আগুন। চিরতরে বন্ধ হয় মুলাক্কারাম কর।
- পরবর্তী সময়ে নাংগেলির সম্মানে যে গ্রামে সে থাকত তার নাম পরিবর্তিত করে রাখা হয় মুলাচিপারাম্ভু। যার মানে- Land of the breasted woman। মুলাচিপারাম্ভুর বাতাসের গন্ধে আজও ভেসে আছে নাংগেলি ও চিরকান্দান।
Venue: Madhusudan Mancha
-
Premium @ ₹100
Stock:: 54 seats
Premium₹100